Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষি পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও লাভজনক করার কৌশল

কৃষি পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও লাভজনক করার কৌশল
কৃষিবিদ ড. মোঃ ওমর আলী
কৃষি যদি হয় দুর্বার বিনিময়ে আমরা পাবো পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাবার। আর সেই সাথে লাগসই প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক ব্যবহার করে কৃষিপণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও   কৃষিকে লাভজনক করা এসময়ের অগ্রগণ্য দাবি। কৃষি হচ্ছে সবচেয়ে আধুনিক আর পরিবর্তনশীল বিজ্ঞান। আধুনিকতা আর আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে কৃষির পালেও বাতাস লেগেছে, পরিবর্তিত হচ্ছে   কৃষি। মানুষের চাহিদা আর আবহাওয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখেই প্রযুক্তির উন্নয়ন করা হয়।
আগের যুগের কৃষি ব্যবস্থা আর বর্তমান যুগের কৃষির মাঝে রয়েছে আকাশ-পাতাল তফাৎ। আগে জনসংখ্যা ছিল কম, জমি ছিল বেশি, মানুষ শুধু তার নিজস্ব প্রয়োজনেই পরিকল্পনাহীনভাবে আবাদ করত। খুব একটা লাভ-লোকসানের হিসাব করত না। কিন্তু বর্তমানে মান্ধাতার আমলের সেই তত্ত্ব আর কাজ করে না। কারন বর্তমানে কৃষক তার কৃষি কাজকে একটি ব্যবসায়ী চিন্তাভাবনায় রূপ দিয়েছে এবং সে তার কাজকর্মে সব সময় লাভ-লোকসানের হিসেব খুঁজে। প্রতিটি কাজেরই একটি পরিকল্পনা থাকে, আর সেই পরিকল্পনার উপরই কাজের বাস্তবায়ন এবং লাভ-লোকসান নির্ভর করে। তেমনি   কৃষি কাজেরও রয়েছে একটি উৎপাদন পরিকল্পনা। যুগোপযোগী উৎপাদন পরিকল্পনা গ্রহণ করলে একদিকে যেমন আসবে উৎপাদনের গতিশীলতা অন্যদিকে পরিপূর্ণ হবে লাভের প্রত্যাশা। তাই বাজার চাহিদানুযায়ী কৃষি পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি  ও লাভজনক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে করণীয় বিষয়গুলো: প্রথমত বাজার চাহিদা অনুযায়ী ফসল নির্বাচন করতে হবে। সেই সাথে জমি এবং আবহাওয়া নির্বাচিত ফসলের উপযোগী কি না তা অবশ্যই যাচাই করতে হবে। ফসল নির্বাচনে মাটির উর্বরতা বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে মাটির উর্বরতা উন্নয়নে ফসল ধারায় একই ফসল বারবার চাষ না করে শস্যপর্যায় অবলম্বন করতে হবে এবং বছরে জমিতে কমপক্ষে একটি শিমজাতীয় ফসল যেমন ডালজাতীয় ফসল (মসুর, ছোলা, খেসারি, মুগ এবং মাসকলাই ইত্যাদি), শিম এবং বাদাম ইত্যাদি চাষ করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় কোন একটি ফসল চাষে বেশি লাভ হলে সবাই মিলে ঐ ফসলের চাষ শুরু করে, ফলে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বাজারমূল্য কমে যায়। তখন সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঐ ফসল চাষ থেকে বিরত থাকে। ফলশ্রুতিতে, পরবর্তীতে বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারমূল্য বেড়ে যায়। ফসল চাষে এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
নির্বাচিত ফসলের উন্নত জাতের ভালো বীজ সংগ্রহ করে ফসলের প্রয়োজন মোতাবেক ভালোভাবে জমি চাষ ও মই দিয়ে সময়মতো বীজ বপন করতে হবে। অনেকক্ষেত্রে জমি সময়মতো জো অবস্থায় না আসার কারণে সময়মতো জমি চাষ দেওয়া সম্ভব না হলে বিভিন্ন ধরনের সংরক্ষণ কৃষি পদ্ধতি রয়েছে- যেমন সাথী ফসল চাষ, পাওয়ার টিলার অপারেটর চালিত বীজ বপন যন্ত্র, বেড প্ল্যান্টার ইত্যাদি জমির অবস্থাভেদে ব্যবহার করে সময়মতো ফসল বপন করা যেতে পারে। উচ্চ মূল্যমান সম্পন্ন ফসল যেমন শাকসবজি ও ফলমূল আগাম চাষ করলে বেশি লাভ করা যায়। এজন্য উঁচু জমি নির্বাচন করে আগাম ফসল চাষ করতে হবে। জমিতে ফসলের চাহিদানুযায়ী সার ও সেচ দিতে হবে। মাটিতে মুগ, ধইঞ্চা ও শনপাট ইত্যাদি চাষ করে সবুজ অবস্থায় মাটির সাথে মিশিয়ে মাটির উরর্বতাসহ মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি করা যায়, যা পরিবেশবান্ধব কৃষি উৎপাদনে সহায়ক। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি জমি থেকে বের করে দিতে হবে। সময়মতো আগাছা, রোগ ও পোকামাকড় পরিকল্পিতভাবে পরিবেশবান্ধব উপায়ে দমন করতে হবে এবং মাঝে মাঝে ফসলের মাঠ পরিদর্শন করতে হবে। জমি থেকে সময়মতো ফসল কাটা এবং মাড়াই যত্ন সহকারে করতে হবে। কারণ সময়মতো ফসল কাটা ও মাড়াই করলে ফসলের উৎপাদনজনিত ক্ষয়ক্ষতি কম হয় এবং ফসলের ফলন ও গুণাগুণ উভয়ই বাড়ে। এ ছাড়াও আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাবে যাতে ফসল নষ্ট না হয় সেজন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সঠিকভাবে ফসল ঝাড়াই ও পরিষ্কার করে ভালোভাবে শুকিয়ে পরিমিত আর্দ্রতায় এনে ফসল সংরক্ষণ করতে হবে।
ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ এবং বেশি বাজারমূল্য পাওয়ার জন্য ফসল গ্রেডিং করতে হবে। উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত বাজার যাচাই করে বেশি দামে বিক্রির চেষ্টা করতে হবে। পরিবেশবান্ধব       কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সমন্বিত শস্য ব্যবস্থাপনার উপর জোর দিতে হবে। এতে করে একদিকে যেমন পরিবেশের উন্নয়ন ঘটবে অন্যদিকে ফসল চাষও লাভজনক হবে।
সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা (যেমন- ফসল, পশুপালন,           হাস-মুরগি এবং মৎস্য চাষ) গড়ে তুলতে হবে। এতে করে প্রত্যেকটি কম্পোনেন্ট একে অপরের পরিপূরক হবে। ফলশ্রুতিতে, খামার লাভজনক এবং পরিবেশবান্ধব হবে। মাছ চাষের ক্ষেত্রে পানির পরিমাণ এবং পানির স্থায়িত্বের বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। যেমন- পানির পরিমাণ কম এবং কম স্থায়িত্বকাল হলে দ্রুত বর্ধনশীল মাছের চাষ করতে হবে। যেমন-সরপুঁটি, তেলাপিয়া এবং কার্পজাতীয় ইত্যাদি। ধানের জমিতেও চারিদিকে আইল বেঁধে পানি জমিয়ে রেখে স্বল্পকালীন সময়ে দ্রুত বর্ধনশীল মাছ লাভজনকভাবে চাষ করা যায়। আর যেখানে পানির গভীরতা বেশি সেখানে পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষের ক্ষেত্রে অবশ্যই নিম্নস্তর, মধ্যস্তর এবং উপরের স্তর বিবেচনায় রেখেই প্রত্যেক স্তরভেদে বিভিন্ন স্তরের মাছ চাষ করতে হবে।
পশুপালনের ক্ষেত্রে- দুগ্ধ উৎপাদন বা গরু মোটাতাজাকরণ যাই করা হোক না কেন অবশ্যই উন্নত জাত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়াও গোখাদ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্যান্য খাদ্যের সাথে অবশ্যই সারা বছরব্যাপী কাঁচাঘাসের জোগান থাকতে হবে। এক্ষেত্রে প্যারা ও নেপিয়ার ইত্যাদি বর্ধনশীল ঘাসের চাষ করতে হবে।
বসতবাড়ির আশে-পাশের পতিত/অপরিকল্পিত ব্যবহৃত জায়গাগুলোকে পরিকল্পিতভাবে সবজি ও ফলমূল  চাষের আওতায় আনলে একদিকে যেমন জমির সুষ্ঠু ব্যবহার হবে অন্যদিকে সারা বছরব্যাপী প্রয়োজনীয় সবজির জোগান পাওয়া যাবে, যা পরিবারের পুষ্টি মিটানোসহ আর্থিকভাবে লাভজনক হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগ কর্তৃক উদ্ভাবিত এলাকাভিত্তিক ৮টি মডেল রয়েছে, যা ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত পদ্ধতিতে বসতবাড়িতে সবজি ও ফলমূল চাষ লাভজনক করা সম্ভব। বৃক্ষ রোপণের ক্ষেত্রে প্রথমত একটি বিষয় খেয়াল রাখা দরকার যে, এলাকাভিত্তিক কোন ফলের চাষ বেশি উপযোগী হলে সে এলাকার জন্য সেই ফলের গাছ লাগানোই উত্তম। কারণ এ থেকে একই সাথে ফল ও কাঠ দুটোই পাওয়া যাবে। যেমন রাজশাহী অঞ্চলের জন্য আম গাছ ও ভাওয়াল গড়ের জন্য কাঁঠাল ইত্যাদি এলাকাভিত্তিক উপযোগিতানুযায়ী বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। ফলের ক্ষেত্রে অবশ্য উন্নত জাতের কলম চারা লাগাতে হবে। এ ছাড়া যেসব অঞ্চলে ফলের খুব একটা উপযোগিতা নেই সেখানে এলাকার উপযোজ্যতানুযায়ী লাভের বিষয়টি মাথায় রেখেই বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। আর আবাদি জমির আইলের ধারে মাটি থেকে বেশি রস ও খাদ্যোপাদান শোষণ করে এবং বেশি ডালপালা হয় এধরনের গাছ লাগানো থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন ইউক্লিপটাস ও বাঁশ ইত্যাদি গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণ রস ও খাদ্যোপাদান শোষণ করে থাকে যা ফসলের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
আখ একটি ভারী শিল্প ফসল। বাংলাদেশের অনেক এলাকাতেই এই ফসল চাষ হয়ে থাকে। উপযুক্ত জমি, উন্নত জাত ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এর মাধ্যমে এর ফলন বর্তমানের চেয়ে ১.৫ থেকে ২ গুণ বাড়ানো সম্ভব। মিল  এবং গুড় এলাকাতেই ঈশ্বরদী ৩২, ঈশ্বরদী ৩৩, ঈশ্বরদী ৩৪, ঈশ্বরদী ৩৭, ঈশ্বরদী ৩৯, বিএসআরআই ৪৪, বিএসআরআই ৪৫, বিএসআরআই ৪৬ এবং বিএসআরআই ৪৮ জাতগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে একদিকে আখের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি চিনি ও গুড়ের  উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। বিএসআরআই উদ্ভাবিত বিএসআরআই ৪২ ও বিএসআরআই ৪৭ চিবিয়ে খাওয়া জাতের আখ চাষের মাধ্যমে  কৃষকদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা সম্ভব। এছাড়াও  আখের সাথে সাথীফসল হিসেবে আলু, পিয়াজ, রসুন, টমেটো, ফুলকপি, মসুর, ছোলা ইত্যাদি চাষ করে কৃষকের  অন্তর্বর্তীকালীন আয় বাড়ানো যেতে পারে।
সঠিক উপায়ে কৃষি পণ্য সংরক্ষণ করে উপযুক্ত সময়ে বিক্রি করলে নিজস্ব আয় বাড়বে। এ ব্যাপারে নিকটস্থ শস্যগুদামে ঋণ প্রকল্পের গুদামসমূহে কম খরচে শস্য পণ্য সংরক্ষণ ও ঋণ গ্রহণ করা যেতে পারে। কৃষি পণ্যের উপযুক্ত মূল্য প্রাপ্তি ও বাজারজাতকরণ দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমবায়ভিত্তিক বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ফলে বড় বাজারসমূহে পণ্য দেয়া ও বিক্রি সম্ভব হবে এবং নিজস্ব আয় বাড়বে।
কৃষি পণ্যের উপযুক্ত মূল্য প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় বাজার তথ্য যাচাই করতে হবে। এ ব্যাপারে পেপার, পত্রিকা, মোবাইল ও ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে হবে। পচনশীল পণ্য দ্রুত বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। বেশি লাভ পেতে হলে গ্রামীণ পর্যায়ে মৌসুমভিত্তিক ফলমূল ও শাকসবজির স্বাস্থ্যসম্মত ক্ষুদ্র প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। প্রক্রিয়াজাতকৃত পণ্যসামগ্রী পরবর্তী সময়ে (অসময়ে) ব্যবহার বা বাজারের চাহিদা এবং মূল্য দেখে বিক্রি করলে আয় বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান বিশ্ব যখন মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাসী তখন বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করতে হলে পণ্যের উপযুক্ত ও আধুনিক প্রক্রিয়াজাতের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সর্বোপরি, কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বিপণন খরচের খাতগুলো চিহ্নিত করে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস করতে হবে। এতে করে একদিকে যেমন নিজস্ব পণ্যের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে অন্যদিকে ক্রেতা সকলও অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ক্রয় করতে পারবে। ফলশ্রুতিতে, ব্যক্তি, দেশ ও জাতি সকলেই উপকৃত হবে। আর উপরোক্ত বিষয়সমূহে কৃষককে যুগোপযোগী করতে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।

লেখক : মহাপরিচালক, বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঈশ^রদী। মোবাইল নং-০১৭১২৫৪৩৭২০, ই-মেইল :dg-bsri@bsri.gov.bd


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon